গাইবান্ধার ফুলছড়িতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তথ্যের সম্ভার নিয়ে আসা তথ্য আপার উঠান বৈঠক। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় এবং উপজেলা তথ্যকেন্দ্রের আয়োজনে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠান হচ্ছে।
আজ ২০ নভেম্বর উপজেলার ধনারপাড়া,কঞ্চি্পাড়ায় উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা জনাব জেসমিন আক্তার এর সভাপতিত্বে এক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ আবু রায়হান দোলন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা জনাব মোঃ কাজল মিয়া, তথ্যসেবা সহকারী মোছাঃ ফেরদৌস আরা , মোছাঃ তুনাজ করিম প্রমুখ।
উঠান বৈঠকে উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা জনাব জেসমিন আক্তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত মহিলাদের নিকট তথ্য আপাঃ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের মাঝে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্যকেন্দ্রে এসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার ও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে গিয়ে ঐ এলাকার মহিলাদের মাঝে ভিডিও প্রদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথীর বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা জনাব মোঃ কাজল মিয়া বলেন, উন্নয়নের যে মহাসড়কে বর্তমান বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে তার পেছনে প্রধান ভুমিকা রাখছে নারীরা।তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও দুর্দর্শিতার নিদর্শন স্বরূপ তথ্য আপা প্রকল্প চালু হয়।যেহেতু দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয় তাই নারীদের পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে। তিনি উপজেলার সরকারি সেবাসমূহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লার্নিং, ই-কমার্স, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে করনীয় বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ডিজিটাল সেবা, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতিমূলক কর্মকাণ্ডসহ অনেক বিষয়ে সচেতন নয়। তাই ডিজিটাল সেবা নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। আর এ সেবাগুলো মহিলাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকার এ তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথীর বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ আবু রায়হান দোলন বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। তথ্য আপা প্রকল্প নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে। বাল্য বিবাহ রোধ, অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনে নারীর ভুমিকা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নারীর অবদানসহ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও সচেতনতামুলক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।তিনি গ্রাম্য নারীদের আধুনিক নাগরিক সেবা গ্রহনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জরুরী কল সেন্টারে কল করে নারীর প্রতি যেকোন প্রকার সহিংসতা রোধে এগিয়ে আসার জন্য তিনি উপস্থিত নারীদের আহ্বান জানান। ৩৩৩ কিংবা ৯৯৯ সহ বিভিন্ন জরুরী নাম্বারগুলো্তে কল করে সেবা গ্রহণ সম্পর্কে সচেতন করে তুলেন।তিনি বলেন, মহিলাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প, সংস্থা কাজ করছে। তিনি পরবর্তিতে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উঠান বৈঠকে আসা ধনারপাড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, আমরা সবসময় সংসারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করি। আমি আগে বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ের খারাপ দিক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু তথ্য আপার উঠান বৈঠকে এসে এসব খারাপ বিষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পেরেছি। আমি সচেতন হয়েছি এবং যারা উঠান বৈঠকে আসতে পারেনি আমি তাদেরও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমিসহ গ্রামের গৃহিণীরা তথ্য আপার উঠান বৈঠক দ্বারা অনেক উপকৃত হচ্ছি। বেশি বেশি করে এ ধরনের উঠান বৈঠকের আয়োজন করা উচিত। গ্রামের মহিলারা সচেতন হলেই সমাজ থেকে এ ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাস নামক সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে দূর করা সম্ভব।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস